রাকিব শান্ত, উত্তরবঙ্গ ব্যুরো প্রধানঃ আড়াই মাস আগে নিখোঁজ হয় বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়ন এর শিবা কলমা গ্রামের শ্রি অনীল চন্দ্র সরকার এর ছেলে শ্রী বিধান চন্দ্র সরকার(২০), গতকাল ৩ জন আসামি কে গ্রেফতার এর পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ বেলা ১২ টায় শিবা কলমা গ্রামের এক জমিতে পুঁতে রাখা লাশ গলিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ, ডিবি, ও কাহালু থানা পুলিশ ।
মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে শ্রী বিধান চন্দ্রকে অপহরণ করে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আসামী গ্রেফতার, ভিকটিমের মৃতদেহ ও আলামত উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ বগুড়া।
গত ইং ১২/০৪/২০২৩ তারিখ শ্রী অনীল চন্দ্র সরকার(৪৬) বগুড়া কাহালু থানায় হাজির হয়ে জানান যে তার ছেলে শ্রী বিধান চন্দ্র সরকার(২০) কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না সেই সংক্রান্তে কাহালু থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করা হয় যাহার জিডি নং-৬১১, তাং-১২/০৪/২০২৩ খ্রি.। তাৎক্ষনিকভাবে এ সংক্রান্তে অফিসার ইনচার্জ কাহালু থানাসহ অন্যান্য অফিসার ফোর্সরা নিখোঁজ বিধানকে খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ভিকটিম নিখোজ হওয়ার প্রায় ১.৫ মাস পর ভিকটিম এর বাবা শ্রী অনীল চন্দ্র সরকারকে কোন একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি অপরিচিত ফোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে জানায় তার ছেলে ভিকটিম বিধান তাদের হেফাজতে আছে। তার ছেলেকে ফেরত পেতে চাইলে ৬,০০,০০০/-(ছয় লক্ষ) টাকা মুক্তিপন দিতে হবে।
এ সংক্রান্তে তাৎক্ষণিক বগুড়া জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোঃ স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে ডিবি বগুড়া’র ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ, এর নেতৃত্বে নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে টিম ডিবি বগুড়া’র একটি চৌকস টিম ও কাহালু থানা পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু করে। গত ২৩/০৬/২০২৩ ইং তারিখ রাত্রী কাহালু থানা ও সদর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ ১। শ্রী বিপুল চন্দ্র প্রাং(৩৫), ২। শ্রী দিনেশ চন্দ্র প্রাং(৪১), ৩। শ্রী উৎপল চন্দ্র(২৪)-দেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বাটন মোবাইল ফোন সিমকার্ড সহ (যা দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল) জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামীরা ও ভিকটিম বিধান পূর্ব পরিচিত। আসামীরা ভিকটিমের পিতার নিকট থেকে অর্থ আদায় করার জন্য তাকে আটক করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১১/০৪/২০২৩ তারিখ আসামীরা ভিকটিমকে কৌশলে কাহালু থানাধীন শিবাকলমা গ্রামের পূর্বে কাহালু থানার সীমান্তবর্তী ভাদাখাল (সরকারী নালা) নামক একটি জন মানবশূন্য এলাকায় সন্ধ্যার পরে নিয়ে যায়। তারপর তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একত্রে ভিকটিমসহ মদ্য পান করে। ভিকটিম নেশাগ্রস্থ হলে পূর্ব পরিকল্পনামতে গ্রেফতারকৃত আসামী বিপুল ও উৎপল ভিকটিমের সাথে কথা বলতে থাকে এবং গ্রেফতারকৃত অপর আসামী দিনেশ পেছন থেকে ভিকটিমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। ভিকটিম মাটিতে পড়ে গেলে আসামী উৎপল ভিকটিমকে তার নিকট থাকা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। তাদের পরিকল্পনা ছিলো ভিকটিমকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলা কিন্তু আঘাত গুরুত্বর হওয়ার কারণে ভিকটিমকে তারা তাৎক্ষনিক হত্যার সিন্ধান্ত নেয়। ভিকটিম আঘাতের ফলে পাশের নালায় পড়ে গেলে আসামীগণ তাকে পানিতে মাথা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে পাশেই ভিকটিমকে মাটি খুড়ে পুতে রাখে। তাড়াহুড়ার কারণে আসামীগণ কাজটি ঠিকমত করতে পারে নাই। পরদিন ভোরবেলা আসামী বিপুল কি অবস্থা জানার জন্য লাশ পুতে রাখার স্থানে গেলে দেখতে পাই যে, শেয়ালে মাটি খুড়ে লাশের একটি হাত বের করে ফেলেছে। তাৎক্ষনিক আসামী বিপুল মাটি চাপা দেয়। বিপুল ৪/৫ দিন যাবৎ বিষয়টি নজরদারী করে এবং আসামী দিনেশ ও উৎপলের সাথে আলোচনা করে অন্যস্থানে আরো ভালভাবে পুতে রাখার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে আসামীরা ৪/৫ দিন পর লাশটি সরিয়ে প্রায় ৫০ গজ দূরে জমি সেচের ড্রেনের নিচে গভীর করে পুতে ফেলে। ঘটনাটি প্রায় ১.৫ মাস অতিবাহিত হবার পরেও কেউ কোন কিছু না বুঝতে পারার কারণে তারা মুক্তিপন আদায়ের লক্ষ্যে ডিসিস্ট বিধান এর পিতা অনীল চন্দ্রকে মোবাইল করে মুক্তিপন দাবী করতে শুরু করে।
মুক্তিপন সংক্রান্তে ডিসিস্টের পরিবারের দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীদের শনাক্তপূর্বক জেলা গোয়েন্দা শাখা, বগুড়ার চৌকস টিম নিরবিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আসামীদের গ্রেফতার করলে আসামীরা ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করে এবং উল্লেখিত বিবরণ প্রদান করে। উক্ত বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে একমাত্র সন্তানের খুনির ফাঁসি চেয়ে সন্তান হারা মায়ের আর্তনাদ